নিজস্ব প্রতিনিধি: হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন করল মিসরস্থ বাংলাদেশী প্রবাসীরা।
১৭ই মার্চ বৃহস্পতিবার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শিশু কিশোরদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং পুরস্কার বিতরণ।
স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় দূতাবাস প্রাঙ্গণে মিসরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে পতাকা উত্তোলন ও জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে দিবসটির কার্যক্রম শুরু করেন।
সন্ধ্যা ৭টায় ফারুক হোসাইন এর সঞ্চলনায় আল- আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেজাউল করিমের
পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াতের মধ্য দিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা থেকে প্রেরিত মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বানী পাঠ করে শোনান যথাক্রমে দূতাবাসের দূতালয় প্রধান মুহাম্মদ ইসমাঈল হুসাইন, দ্বিতীয় সচিব আতাউল হক, রফিকুল ইসলাম ও রেজাউল করিম খান প্রমুখ।
রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার পর প্রদর্শন করা হয় ঢাকা থেকে পাঠানো প্রামাণ্যচিত্র ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’।
আলোচনা পর্বে জাতির পিতার ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসটির উপর আলোচনা করেন, বাংলাদেশে ইজিপ্ট এয়ারের জেনারেল সেলস এজেন্ট ‘অ্যালো ঢাকা এভিয়েশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আলী সামী, বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তা মিস নাদিয়া ইসলাম সহ মিসরে কর্মরত বিভিন্ন শ্রেণীর বাংলাদেশী প্রবাসীবৃন্দ।
সমাপনী বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্যের উপর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি তার বক্তৃতায় জাতির পিতার আদর্শের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে গড়ার কাজে প্রত্যেককে তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বাত্মক আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিসত্তার ইতিহাসে একমাত্র মহানায়ক এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের লাল-সবুজের পতাকার নির্মাতা তিনি। ‘জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে আমাদের সবাইকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।’
রাষ্ট্রদূত হতাশার সাথে বললেন, আজ একজন প্রবাসীর সাথে পরিচয় হল যিনি বিগত ২৮ বছর মিসরে আছেন। এদেশে জন্ম নেওয়া তার দুই সন্তানের মধ্য একজন ও বাংলা বলতে পারে না, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখ জনক।
তিনি বলেন, আপনার সন্তানের মুখে “বাবা তুমি কেমন আছ” শুনে আপনি যে আত্মতৃপ্তি পাবেন তা অন্য ভাষায় শুনে পাবেন না। তাই, বিদেশের মাটিতে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মকে আমাদের শেকড়ের কাছে নিয়ে যেতে হবে, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা, ভাষা ও সাংস্কৃতিক সাথে পরিচিত করাতে হবে।
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সব প্রবাসীকে এগিয়ে এসে সোনার বাংলা গড়ার কাজে নিয়োজিত হতে হবে।
আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে শিশু কিশোরদের নিয়ে কেক কাটেন মান্যবর রাষ্ট্রদূত ও তার সহধর্মিণী মিসেস ফাহিমা তাহসিনা। অনুষ্ঠানে মিসরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রবাসী শিশু-কিশোরদের মাঝে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় দুই গ্রুপে অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের উভয় গ্রুপের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদেরকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে কায়রোর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অধ্যাপক, শিক্ষার্থী, কর্মজীবী ও বিভিন্ন পেশায় নিয়জিত পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সকলকে রাতের খাবারে আপ্যায়ন করা হয়।